সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে তালামীযে ইসলামিয়ার এক নেতার ওপর হামলার ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক সংগঠন জড়িত নয় বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তদন্তে উঠে এসেছে, এটি মূলত দুজন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে সংঘটিত হয়েছে। অভিযুক্ত একজন শিক্ষার্থীর ছাত্রাবাসের সিট বাতিল করা হয়েছে, পাশাপাশি জড়িতদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে
সোমবার (১০ মার্চ) কলেজ প্রশাসনের কাউন্সিল মিটিংয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের ১৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মো. রিয়াজ জানান, এ ঘটনায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ১১ জন। তদন্তে দেখা গেছে, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও তালামীযে ইসলামিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক মিজানুর রহমান রিয়াদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য জাকিরুল ইসলাম হৃদয়ের মধ্যে ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি কমেন্টকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে ছাত্রাবাসে তাদের মধ্যে মারামারি হয়, যাতে দুজনেই আহত হন।
অধ্যক্ষ বলেন, “তদন্তে কোনো সংগঠনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। এটি মূলত রিয়াদ ও হৃদয়ের মধ্যকার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘটেছে। তদন্ত কমিটি স্পষ্টভাবে বলেছে, শিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। রিয়াদ প্রথমে শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও পরে তদন্ত কমিটির সামনে সে এমন কিছু বলেনি। তার বক্তব্যের মধ্যে কিছু গড়মিল পাওয়া গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “হৃদয় এই সমস্যা সম্পর্কে আগে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতো। কিন্তু সে তা না করে সরাসরি সিনিয়রের রুমে গিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। এজন্য তার ছাত্রাবাসের সিট বাতিল করা হয়েছে।”
কী ঘটেছিল সেদিন?
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের প্রথম ব্লকে এই মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে রিয়াদ ও হৃদয় আহত হন। পরে রিয়াদ দাবি করেন, তার ওপর ছাত্রশিবিরের কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষের নির্দেশে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর হুমায়ুন কবীর চৌধুরীকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তাদের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
এই ঘটনার প্রতিবাদে তালামীযে ইসলামিয়ার পক্ষ থেকে সিলেট নগরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সংগঠনটি একে ‘ছাত্রশিবিরের ঘৃণ্য হামলা’ বলে দাবি করে। অন্যদিকে, শিবির তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বিবৃতি দেয় এবং পাল্টা মিছিলও করে। পরে তালামীযের অভিভাবক সংগঠন আল ইসলাহ ও জামায়াত নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়, যেখানে জামায়াতের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়। তবে শিবির এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে।
কলেজ প্রশাসনের সিদ্ধান্ত
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কলেজ প্রশাসন জড়িতদের সতর্ক করেছে। অধ্যক্ষ জানান, “এখন থেকে যেকোনো সমস্যা হলে প্রশাসনকে জানাতে হবে। নিজেদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, তদন্তের ফল সঠিক, আবার কেউ দাবি করছেন, এতে কিছু তথ্য উপেক্ষিত থাকতে পারে। তবে কলেজ প্রশাসন বলছে, তারা নিরপেক্ষ তদন্ত করেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: মনিরুজ্জামান পিয়াস, সম্পাদক: মেহেদী হাসান তুহিন, ঠিকানা: পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, সুনামগঞ্জ।
Copyright © 2025 sunamganjpost. All rights reserved.